শনিবার ১৮ মে ২০২৪
Online Edition

ঘাটাইলে ৫ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা এনজিও ‘সুবোধ’

মোঃ খায়রুল ইসলাম, ঘাটাইল সংবাদদাতা: টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে ‘সুবোধ’ নামে একটি এনজিও’র বিরুদ্ধে গ্রাহকের প্রায় পাঁচ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গ্রাহকরা ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

সমবায় সমিতি আইন, ২০০২ (সংশোধিত) অনুযায়ী ব্যাংকিং কার্যক্রম জিপিএস, এফডিআর সঞ্চয়পত্র সেভিং হিসাব খুলে কোনো ক্রমেই গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করা যাবে না। অথচ এখানে এসব নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ক্ষুদ্রঋণের নামে গ্রামের সহজ-সরল লোকের কাছ থেকে গ্রাহকদের মধ্যে লাখে মাসে ১৮০০-২০০০ টাকা লাভসহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্কিম দেওয়ার লোভ দেখিয়ে সঞ্চয় নেওয়া শুরু করে সুবোধ কর্তৃপক্ষ। অতঃপর আমানতকারীদের টাকা না দিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই অফিসে তালা ঝুলিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায় এই এনজিও সুবোধ কর্তৃপক্ষ।  

জানা গেছে, ২০২০ সালে উপজেলা সমবায় অফিস থেকে নিবন্ধন নিয়ে ‘সুবোধ’ নামে এনজিও গঠন করেন আনেহলা ইউনিয়নের দত্তগ্রাম এলাকার বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আল নোমান। সমিতির সভাপতি তিনি নিজে, সম্পাদক স্ত্রী। নিকট আত্মীয়দের দিয়েছেন অন্যান্য পদগুলো। মাঠকর্মীদের নিয়ে এই ঋণদান কর্মসূচি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন তিনি। সমিতির বর্তমানে হাজারের অধিক গ্রাহক রয়েছে। নিবন্ধন অনুযায়ী শুধুমাত্র ধলাপাড়া ও সাগরদীঘি ইউপিতে সীমাবদ্ধ থাকার কথা থাকলেও সুবোধ-২ নাম দিয়ে পরিচালিত হতো আরো একটি সমিতি। রসুলপুর ও দেওপাড়ায়ও চলত সমিতির কার্যক্রম।

ধলাপাড়া এলাকায় যে বাসায় সমিতির কার্যক্রম চলত সে বাসার মালিক হারুন অর রশিদ জানান, কাউকে কিছু না বলে গত ৪ এপ্রিল অফিস কক্ষে তালা দিয়ে পালিয়ে গেছেন সমিতির মালিকসহ মাঠকর্মীরা। সমিতির মাঠকর্মী মনিরাকে সভাপতি নোমানের বাড়িতে পাঠিয়ে জানতে পারি নোমানের বাবা নাকি মনিরাকে জানিয়েছে বাড়ি থেকে সব কিছু গুছিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে নোমান কোথায় গেছেন জানেন না তারা। হারুনের দাবি তিনি চার মাসের ঘর ভাড়া পান। প্রতিদিনই মানুষ ভিড় করছেন সমিতির কার্যালয়ের সামনে। ধলাপাড়া সরিষাআটা গ্রামে ফারুখ হোসেন জানান, সমিতিতে ৫ লাখ টাকার এফডিআর করেছিলেন তিনি। ১ লাখ টাকায় প্রতি মাসে ২ হাজার টাকা করে পেতেন। ওই সমিতিতে এফডিআর করেছেন তার মতো অনেকেই। সরাবাড়ি গ্রামের এস এন খান রানা বলেন, সমিতিতে তার ৩১ হাজার টাকা জমা আছে। তার দাবি, সদস্যদের প্রায় ৫ কোটি টাকা নিয়ে গেছেন সমিতির কর্মকর্তারা। উপজেলা সমবায় অফিসের তথ্যমতে, সমিতি পরিচালিত হবে ছয় সদস্যের কমিটির মাধ্যমে। বছরে একবার করা হয় অডিট। চলতি বছরের ৩১ মার্চ ছিল অডিট করার শেষ সময়। এ বিষয়ে চিঠি দিলেও অডিট করতে রাজি হয়নি কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ অডিট করা হয় ২০২১-২২ অর্থবছরে। সেখানে সমিতির সদস্য দেখানো হয় মাত্র ২০ জন। অথচ পেচারআটা গ্রামে সালমান নামে এক লোক সমিতির ৫০৯ নম্বর সদস্য। স্থানীয়দের দাবি সুবোধের সদস্য সংখ্যা হাজারের বেশি। এ ব্যাপারে জানতে ‘সুবোধ’ সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুল্লাহ আর নোমানকে  ফোন করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ওয়াজেদ আলী বলেন, সমবায় সমিতি পালিয়ে গিয়ে পার পাবে না। ডিপোজিট এবং এফডিআর করার অনুমতি না থাকলেও তারা কীভাবে এসব করত? এত অনিয়ম থাকার পরও অডিটে কেন ধরা পড়েনি? এমন প্রশ্নের কোন জবাব দেননি তিনি। শুধু বারবার বলেছেন ‘বিষয়টি দেখতেছি।’

ঘাটাইল থানার ওসি আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনায় ঘাটাইল থানায় কোনো মামলা নেই।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিয়া চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ